পঞ্চাশ দশকের পূর্বে রৌমারী ছিল সুখী-সমৃদ্ধ অঞ্চল। গোলায় ধান উঠানোর পর কৃষকের হাতে থাকত অফুরন্ত সময়। রাখাল বালকদেরও করতে হতোনা গৃহ পালিত জীব জন্তুর খড় ঘাসের চিন্তা। তারা সকালে সকল কাজ সমাপ্ত করে বিকালটা বাচাতো খেলাধুলার জন্য। প্রতি পাড়ায় পাড়ায় এ সময় ছিল খানিকটা খোলা মাঠ। প্রতি বিকেলে নানা ধরণের খেলা ধুলায় জমে উঠত এসকল মাঠ। বড়দের প্রিয় খেলা ছিল হা-ডু-ডু ও দাড়িয়া বান্দা। ছোটরা লেখত ডাংগুলি, গোল্লাছুট নয়তবা ঘুরাত লাটিম। বড়রাও এক ধরনের লাটিম ঘুরাত সে লাটিমের আকার ছিল বড় আকারের আশহীন নারকেলের মতো। এ লাটিমকে "বাঘা লাটিম" বলা হতো। বর্ষাকালে নৌকা বাইচ খেলা অনুষ্ঠিত হতো।
ষাটের দশকের দিকে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীবিকা নির্বাহের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। পাড়ায় পাড়ায় খেলার মাঠগুলো সজ্বির বাগানে পরিণত হয়। মানুষের জীবন থেকে অবসর নামক শব্দটি উজাড় হয়ে যায়। ফলে গ্রামের সনাতনী খেলাগুলো আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকে এবং তাদের স্থলে আধুনিক ফুটবল ও ক্রিকেট ঢুকে পরে।
ফুটবল:
রৌমারী নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল হলেও সনাতনী খেলাধুলার পাশাপাশি ফুটবলের প্রতি ছিল দারুনভাবে আসক্ত। পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশ ভারতের সময় এ খেলার এমটি উৎকর্ষ সাধন হয়েছিল যে, ভারতের সবোর্ৎকৃষ্ট দল " কলিকাতা মোহামেডান" রৌমারী মাঠে রৌমারীর সাথে খেলতে এসেছিল। এ সময় রৌমারী দলে প্রতিভাবান খেলোয়ারদের মধ্যে মহর উদ্দিন (গোল রক্ষক), মোসলেম, ছক্কু, প্রাণ বল্লব অন্যতম। রৌমারী দলে এ খেলায় ধুবরি থেকেও কয়েকজন খেলোয়ার অংশগ্রহণ করেছিল। স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে এ খেলা আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পরে। ছাত্রদের খেলা শেষে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা মাঠে নেমে পড়ত। এ সময় গ্রামে গ্রামে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাও শুরু হয়। অনেক গ্রামে সংগঠিত টিম তৈরী হয়।
আন্ত: ফুটবল প্রতিযোগিতা:
রৌমারী এলাকার উচ্চ বিদ্যালয়গুলো বরাবরই আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। থানা কেন্দ্রিক, পুরাতন ও অ্ন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে রৌমারী সি.জি.জামান হাই স্কুল থানা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সাধারণত: ভাল ফলাফল করত। ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালে আন্ত:স্কুল প্রতিযোগিতায় রৌমারী সাফল্য অজর্ন করে।
১৯৬৬ সালে থানা পর্যায়ের খেলা সমাপ্তির পর উলিপুর জোনাল খেলায় রৌমারী হাই স্কুল দলের সাথে খেলা পড়ে চিলমারী থানার বিজয়ী দল বালাবাড়ি হাই স্কুলের সাথে। খেলার প্রথম কুড়ি মিনিটের মাথায় রৌমারী হাই স্কুল ৩ গোলে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অনেক নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে রৌমারী হাই স্তুল ৩-২ গোলে বিজয়ী হয়। জোনের দ্বিতীয় খেলায় বিজয়ী হয়ে তারা সেমি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় এবং পরাজিত হয়।
১৯৬৭ সালে আন্ত: স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় একই দল নিয়ে রৌমারী হাইস্কুল ১৯৬৭ তেও ব্রহ্মপূত্র পশ্চিম তীরে চলে আসে। এবারে জোনাল ফাইনালে গুনাইগাছ স্কুলকে রৌমারী হাইস্কুল পরাজিত করে। মহকুমা ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় পুলিশ লাইন মাঠে রিভার ভিউ হাইস্কুলের বিপক্ষে। রিভার ভিউ হাই স্কুল খেলার মাঠে পরাজিত হয়ে মাঠের বাইরে গোলযোগ সৃষ্টি করে। মহকুমা প্রশাসক পরে হস্তক্ষেপ করলে রৌমারীর খেলোয়ার ও কর্মকর্তাগণ বিজয় নিয়ে নিরাপদে ফিরে আসে।
বর্তমানে রৌমারী সি.জি.জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতরে ফুটবল লীগ ও ঈদ-উল-আযহায় ক্রিকেট লীগ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে স্থানীয় খেলোয়ারসহ অনেক বহিরাগত খেলোয়ার অংশগ্রহণ করে। বিনোদনের দিক দিয়ে রৌমারী উপজেলায় প্রতি বছর বিভিন্ন সময়ে দিবসে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS